বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের আরেকটি নতুন ভিডিও পাওয়া গেছে।
ভিডিওটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
নতুন ভিডিওটি বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিসিটিভিতে ধারণ করা। এতে দেখা
যায়, বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে আহত করার পর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা
মিন্নি একাই রক্তাক্ত অবস্থায় রিফাতকে রিকশায় হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতালের সামনে স্থাপনকৃত সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, গত ২৬ জুন
সকাল ১০টা ২১ মিনিটে মিন্নি একাই একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় রক্তাক্ত ও অচেতন রিফাতকে
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নিয়ে যান।
এ সময় মিন্নির ডাকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মামুন
নামে এক যুবক রিফাত শরীফকে বহন করা রিকশার দিকে দৌড়ে আসেন। রিফাতের অবস্থা দেখে হাসপাতালের
ভেতরে গিয়ে একটি স্ট্রেচার নিয়ে রিকশার পাশে আসেন মামুন।
আরও পড়ুনঃদুই মেয়েকে ধর্ষণ করে গ্রেফতার বাবা
এ সময় সেখানে উপস্থিত অনেকেই এগিয়ে আসেন। এরপর রিকশা থেকে নামিয়ে অচেতন
রিফাত শরীফকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়।
হাসপাতালের সামনে উপস্থিত
একজনের ফোন নিয়ে কল দিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলেন মিন্নি। তখনো মিন্নির জামায় রক্ত লেগেছিল।
এরপর হাসপাতালের ভেতরে যান তিনি। এর কিছু সময় পর মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন ও চাচা
আবু সালেহ হাসপাতালে আসেন।
এরপর সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে হাসপাতালের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স আসে। সেখানে
রিফাত শরীফের বন্ধু মঞ্জুরুল আলম ওরফে জন ও তার কয়েকজন বন্ধু হাসপাতালের সামনে আসেন।
তখন কিছু সময় ফোনে কথা বলেন জন।
পরে অ্যাস্বুলেন্সটি হাসপাতালের সামনে এনে রিফাত শরীফকে বহন করে বরিশাল
নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়। ১০টা ৪৪ মিনিটে অক্সিজেন ও দুটি স্যালাইন লাগানো
অবস্থায় রিফাত শরীফকে স্ট্রেচারে করে ওই অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়।
রিফাতকে বহন করা অ্যাম্বুলেন্সটি
১০টা ৪৯ মিনিটে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সামনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের
একটি ও বরগুনা জেলা পুলিশের একটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তবে নতুন ভিডিওটি কোন ক্যামেরার
ধারণ করা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গুরুতর আহত রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার পর চিকিৎসা দেয়ার
সময় উপস্থিত ছিলেন বরগুনার সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র টেকনিশিয়ান সুভাষ চন্দ্র।
সুভাষ চন্দ্র বলেন, রিফাত শরীফকে যখন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা
হয় তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রিফাতের অবস্থা খুব খারাপ
ছিল সেদিন।
বিশেষ করে তার বাম পাশের ফুসফুস ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়।
এ কারণে সব ব্যবস্থা করেও তার জীবন সংকটাপন্ন হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে রক্ত দেয়া
হয়নি।
তবে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রিফাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসক।
২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রিফাতকে কোপানোর ঘটনায়
ধারণ করা প্রথম ভিডিওটিতে দেখা যায়, রিফাতকে সন্ত্রাসীরা যখন কোপাচ্ছিল তখন স্বামীকে
বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন স্ত্রী মিন্নি। সন্ত্রাসীর সঙ্গে যুদ্ধ করেও স্বামীকে
বাঁচাতে পারলেন না স্ত্রী মিন্নি।
একই ঘটনায় প্রকাশিত দ্বিতীয় ভিডিওটিতে দেখা যায়, ঘটনার দিন যখন রিফাতকে
কলেজ গেট থেকে ধরে পূর্ব দিকে নিয়ে যাচ্ছিল সন্ত্রাসীরা তখন সন্ত্রাসীদের পেছনে ছিলেন
মিন্নি।
এই ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পর সন্দেহের জেরে গত ১৩ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে
রিফাত হত্যায় মিন্নি জড়িত বলে অভিযোগ তোলেন রিফাতের বাবা।
একই সঙ্গে দ্বিতীয় ভিডিওর
উদ্ধৃতি দেন মিন্নির শ্বশুর আ. হালিম দুলাল শরীফ। এরপরই ১৬ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদের নামে
বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বহু নাটকীয়তার পর মিন্নিকে ৭ নম্বর আসামি করে রিফাত হত্যা মামলার চার্জশিট
দেয় পুলিশ। ৩ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে বর্তমানে বাবার বাড়িতে আছেন
তিনি।
রিফাত হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হওয়ার পর কারামুক্ত হয়ে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার
বাসায় অবস্থান করলেও আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি
মিন্নি।
তবে এ বিষয়ে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, হাসপাতালের সামনের
ভিডিওটি আমিও পেয়েছি। স্বামী রিফাত শরীফকে বাঁচাতে মিন্নি যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে
তা কলেজের সামনের ভিডিও এবং হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ভিডিওতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
আমি
শুরু থেকেই বলে এসেছি, আমার মেয়ে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। আমার মেয়েকে ষড়যন্ত্র
করে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমার মেয়ে নির্দোষ। আমার মেয়ে ষড়যন্ত্রের শিকার।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেই কলেজের সামনের ভিডিওটি
প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের সামনের ভিডিওটি গোপন করার চেষ্টা করা হয়ছে।
কিন্তু
তা পারেনি তারা। এরকম আরও একটি ভিডিও আমার সন্ধানে আছে। আমি ওই ভিডিওটিও উদ্ধারের চেষ্টা
চালাচ্ছি।
এ বিষয়ে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী বলেন, নতুন ভিডিওটি আমি দেখেছি।
এতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় স্বামীকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন মিন্নি।
তদন্ত
কর্মকর্তার তদন্তে কী আছে সেটা আমি এখনো দেখিনি। কারণ, আদালতে দেয়া পুলিশের অভিযোগপত্রের
কপি এখনো পাইনি আমরা।
তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ যদি এই ভিডিওর বিষয় উল্লেখ না করে, তবে
তদন্ত প্রতিবেদনটি ত্রুটিপূর্ণ হবে।
No comments:
Post a Comment